কাজ এখন হাতের মুঠোয়
কাজ এখন হাতের মুঠোয়-bdroyal |
কাজ এখন হাতের মুঠোয়, বর্তমানে অতন্ত পরিচিত একটি পেশা কাজ করা অনলাইনে টাকা আয়। দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের কাজ করে ঘরে বসেই হাজার হাজার ডলার আয় করা সম্ভব। তবে কাজ
করে ইন্টারনেটে
আয়
করতে গেলে কোন প্ল্যাটফর্ম ধরে এগোচ্ছেন, সে বিষয়ে সতর্ক
থাকতে হবে।
অনলাইনে
আয় করার নানা সুযোগ থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতারণার মুখে পড়তে হতে পারে। অনলাইনে কাজ করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই এ ধরনের প্রতারণামূলক
কাজের ক্ষেত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে। কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট ও রিসোর্স আছে,
যা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে আয় করতে পারবেন।
জেনে নিন এসব সম্পর্কে:
অনলাইনে
আয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার বিষয়টি সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্স কাজের সুযোগ দেয় কয়েকটি ওয়েবসাইট। সেখানে অ্যাকাউন্ট খুলে দক্ষতা অনুযায়ী কাজের জন্য আবেদন করতে হয়। কাজদাতা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যোগাযোগ করে ফ্রিল্যান্সারকে কাজ দেয়।
কয়েকটি
ওয়েবাসাইটে কাজের দক্ষতার বিবরণ জানাতে হয়, যাতে ক্রেতা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। এসব সাইটের মধ্যে ফাইভার ডটকম, আপওয়ার্ক ডটকম, ফ্রিল্যান্সার ডটকম ও ওয়ার্কএনহায়ার ডটকমে
ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়া যায়। ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০০
ডলার পর্যন্ত আয় করা যায়
এসব সাইট থেকে। মনে রাখতে হবে, কাজ শেষ করার পর কাজদাতার অনুমোদন
পেলেই তবেই অর্থ ছাড় দেবেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কাজের
মানের ওপর কাজদাতা রেটিং দিতে পারেন। গ্রাহকের পছন্দ না হওয়া পর্যন্ত
কাজ করে দিতে হয় ফ্রিল্যান্সারকে। বিভিন্ন অনলাইন
পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করে অর্থ আনা যায়।
ওয়েবসাইট
মেকিং
এখন
নিজে নিজে ওয়েবসাইট তৈরির জন্য অনলাইনেই অনেক উপাদান পাওয়া যায়। এর মধ্যে ডোমেইন
নির্বাচন, টেমপ্লেট ও ওয়েবসাইট তৈরির
নকশা প্রভৃতি। যখন পাঠক বা দর্শককে ওয়েবসাইটের
বিভিন্ন কনটেন্ট সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি সারা, তখন গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। গুগলের বিজ্ঞাপন যখন সাইটে দেখানো শুরু হবে এবং তাতে ক্লিক পড়বে, তখন আয় আসতে শুরু
করবে। ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বা দর্শক যত
বেশি হবে, আয়ের পরিমাণ তত বাড়বে।
অ্যাফিলিয়েট
মার্কেটিং
এই
পদ্ধতিতে আয়ের ক্ষেত্রেও নিজের ওয়েবপেজ বা ব্লগ প্রয়োজন।
যখন ওয়েবসাইট বা ব্লগ চালু
হবে, তখন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লিংক তাতে যুক্ত করতে পারবেন। যখন আপনার সাইট থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের পণ্য
বা সেবা কোনো দর্শক কিনবেন, তখনই আপনার আয় আসতে শুরু
করবে।
গ্রাফিকস
ডিজাইনের মাধ্যমে টাকা আয়
অনলাইনে
ঘরে বসে আয়ের ক্ষেত্রে গ্রাফিকস ডিজাইন ভালো উপায়। যাঁরা এই কাজে দক্ষ,
তাঁরা বিভিন্ন ডিজাইন অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে দিয়ে রাখেন। সেখান থেকে তাঁদের আয় আসে। তাঁদের
তৈরি একটি পণ্য অনেকবার বিক্রি হয়, অর্থাৎ একটি ভালো নকশা থেকেই দীর্ঘদিন পর্যন্ত আয় হতে থাকে।
অনলাইনে এ ধরনের অনেক
ওয়েবসাইটে গ্রাফিকসের কাজ বিক্রি করা যায়। এ ছাড়া অনলাইন
মার্কেটপ্লেসগুলোতেও গ্রাফিকস ডিজাইনারদের অনেক চাহিদা রয়েছে।
জরিপ,
সার্চ ও রিভিউ মাধ্যমে টাকা আয়
অনলাইন
জরিপে অংশ নিয়ে অর্থ আয় করতে পারেন।
অনেক ওয়েবসাইট জরিপে অংশ নিলে অর্থ দেয়। এ ছাড়া অনলাইন
সার্চ ও পণ্যের পর্যালোচনা
লিখে আয় করতে পারেন।
তবে, এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত
তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংকিং তথ্য
দেওয়া লাগতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে কাজ
করার সময় সতর্কভাবে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে কাজের
সময় কোনটি প্রকৃত কাজ আর কোনটি স্ক্যাম—যাচাই-বাছাই করে নিয়ে কাজ করতে পারেন।
ভার্চ্যুয়াল
সহকারীতা
এখন
ভার্চ্যুয়াল সহকারীদের কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। ঘণ্টাপ্রতি আয়ও বেশি। বাড়ি থেকে করপোরেট অফিসের নানা কাজ অনলাইনে করে দেওয়ার সুবিধা আছে এখন। ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মী বা নিজের ব্যবসা
নিজেই চালানো যায়। বিভিন্ন দক্ষতার ভিত্তিতে ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ফোন
কল, ই-মেইল যোগাযোগ,
ইন্টারনাল রিসার্চ, ডেটা এন্ট্রি, এডিটিং, রাইটিং, ব্লগ, গ্রাফিকস, টেক সাপোর্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনার মতো কাজ থাকে। ২৪ / ৭ ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট,
অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যাচ, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, পিপল পার আওয়ার, আপওয়ার্কের মতো সাইটগুলোতে কাজ পাওয়া যায়।
অনুবাদ করে টাকা আয়
ইংরেজির
পাশাপাশি অন্য কোনো ভাষা ভালোভাবে জানা থাকলে সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন।
বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে বিভিন্ন ডকুমেন্ট অনুবাদ করে আয় করতে পারেন।
যাঁদের স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, আরবি, জার্মানসহ অন্যান্য ভাষা জানা আছে এবং এগুলো থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ বা ইংরেজি থেকে
এসব ভাষায় অনুবাদ করতে পারলে ভালো আয় করতে পারবেন।
অনেক সময় কাজদাতারা নিজে সময়ের অভাবে অনুবাদের কাজ ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে করিয়ে নেন। ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে এ ধরনের কাজ
পাবেন।
অনলাইন
টিউটর
কোনো
বিষয়ে যদি আপনার পারদর্শিতা থাকে, তবে অনলাইনে সে বিষয়ে শিক্ষা
দিতে পারেন। অনলাইন টিউটরদের এখন চাহিদা বাড়ছে। সব বয়সী শিক্ষার্থীদের
আপনি শিক্ষা দিতে পারবেন। এখানে অন্য দেশের শিক্ষার্থীদেরও পড়ানোর সুযোগ রয়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনলাইন টিউশনির সুযোগ রয়েছে। সেখানে সুবিধামতো সময়ে পড়াতে পারেন ছাত্র। এসব সাইটে নিজের দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হয়। একবার নির্বাচিত হয়ে গেলে ওয়েবিনার পরিচালক হিসেবে অনলাইন সেশন পরিচালনা করতে পারেন। দক্ষতা বাড়লে এ ক্ষেত্র থেকে
অনেক আয় করার সুযোগ
আছে।
সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যম টাকা আয়
ফেসবুক,
টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এখন আর শুধু বন্ধুদের
সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নয়। এগুলো কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের পক্ষ
থেকে সোশ্যাল মিডিয়া পরিকল্পকদের প্রচুর অর্থ দেওয়া হয় তাদের ব্র্যান্ডের
প্রচার করার জন্য। অনলাইনে গ্রাহক টানা, প্রচার করার জন্য অবশ্য সৃজনশীলতা দরকার। বিভিন্ন পোস্ট তৈরি, ভিডিওর মাধ্যমে ফেসবুক বা অন্যান্য মাধ্যমে
প্রকাশ করে তা ভাইরাল করতে
পারলে ভালো অর্থ আসে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্যান-ফলোয়ার তৈরিসহ তাঁদের ধরে রাখতে প্রচুর ধৈর্য ও প্রাসঙ্গিক বিষয়
হওয়া জরুরি।
ওয়েব
ডিজাইন
এখনকার
অনলাইনের কাজের ক্ষেত্রে ওয়েব ডিজাইনের চাহিদা ব্যাপক। কোনো প্রজেক্টে ২০ হাজার থেকে
১ লাখ টাকা পর্যন্ত সহজে আয় করা যায়।
সব ব্যবসায়ী প্রযুক্তিপ্রেমী নন। নিজেদের ওয়েবসাইট তৈরিতে তাঁদের ওয়েব ডিজাইনারের দরকার পড়ে। যাঁরা ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে চান নিজেদের ওয়েবসাইট খুলে সেখান থেকেই ছোট ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন। ওয়েবসাইট তৈরিতে এখন কোডিং আর ওয়েব ডিজাইন
দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ওয়েবসাইট
ব্যবস্থাপনা ও হালনাগাদের জন্যও
ওয়েব ডিজাইনারকে দরকার পড়ে। ফলে ডিজাইনারকে বসে থাকতে হয় না। ক্লায়েন্ট
ও কাজের ওপর ভিত্তি করে ওয়েব ডিজাইনারের আয় বাড়তে থাকে।
কনটেন্ট
রাইটিং এর মাধ্যম টাকা আয়
যাঁরা
লেখালেখিতে ভালো এবং একাধিক ভাষায় সাবলীল লিখতে পারেন, তাঁদের কাজের জন্য বসে থাকতে হয় না। অনলাইন
প্ল্যাটফর্মগুলোতে কাজ করে বা লিখে দক্ষতা
অর্জন করতে পারেন। আর্টিকেল লেখার মানের ওপর ভিত্তি করে আয় আসে। কাজদাতা
নির্দিষ্ট নীতি মেনে লেখার জন্য বলতে পারেন। নির্দিষ্ট বিষয় বা নিশ ধরে
নিজের দক্ষতা বাড়াতে পারলে আয়ের ধারা বেড়ে যায়।
ব্লগিং এর মাধ্যম টাকা আয়
অনেকে
শখ করে অনেক বিষয়ে লেখেন। কিন্তু শখের বিষয়টি যদি পেশাগত কাজে লাগাতে পারেন, তবে অনলাইনে আয় করতে পারবেন।
ব্লগিং করেও আয় করার সুযোগ
আছে। দুই উপায়ে ব্লগ থেকে আয় করা যায়।
একটি হচ্ছে নিজের ব্লগ সাইট তৈরি। ওয়ার্ডপ্রেস বা টাম্বলার প্ল্যাটফর্মে
বিনা মূল্যে ব্লগ শুরু করতে পারেন। আবার চাইলে নিজে ডোমেইন হোস্টিং কিনে ব্লগ চালু করতে পারেন। তবে নিজে ব্লগ চালু করতে গেলে কিছু বিনিয়োগ করার দরকার হবে। ডোমেইন, হোস্টিং কিনতে হবে। নিজের ব্লগ শুরু করাটাই ভালো। কারণ, এতে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী অনেক পরিবর্তন করার সুযোগ আছে। বিজ্ঞাপন, ফেসবুকের ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল, পণ্যের পর্যালোচনা প্রভৃতি নানা উপায়ে ব্লগ থেকে আয় করতে পারেন।
তবে ব্লগ লিখে আয় করতে গেলে
রাতারাতি আয় আসবে না।
এ জন্য প্রচুর সময় ও ধৈর্য থাকতে
হবে। অনেকের ব্লগ থেকে আয় করতে কয়েক
বছর পর্যন্ত লেগে যায়। ব্লগে নিয়মিত কনটেন্ট আপডেটসহ তা সক্রিয় রাখতে
কাজ করে যেতে হয়।
ইউটিউবের মাধ্যম টাকা আয়
যাঁরা
ব্লগ লিখে আয় করতে স্বচ্ছন্দ
নন, তাঁরা ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে ভিডিও থেকে আয় করতে পারেন।
এ জন্য অবশ্য সৃজনশীল আর ভালো সম্পাদনা
জানতে হবে। নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলে তাতে ভিডিও আপলোড করে সেখান থেকে আয় করতে পারেন।
আপনার চ্যানেল কোন ক্যাটাগরির এবং তাতে কোন ধরনের ভিডিও রাখবেন, তা আগেই ঠিক
করে রাখুন। যে বিষয়ে মানুষের
আগ্রহ বেশি, সেই বিষয়ে ভিডিও না রাখলে মানুষ
তা দেখবে না। ভিডিও না দেখলে আয়
হবে না। বিষয়টি অনেকটাই ব্লগের মতো। তবে এ ক্ষেত্রে কনটেন্ট
হচ্ছে ভিডিও। চ্যানেলের সাবসক্রাইবার ও ভিডিও দেখার
সময় বাড়লে আয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। প্রতি হাজার ভিউয়ের হিসাবে গুগল থেকে অর্থ পাবেন।
পিটিসির মাধ্যম টাকা আয়
অনেক
ওয়েবসাইট আছে, যাতে রাখা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলে আপনাকে অর্থ দেওয়া হবে। এ ধরনের সাইটকে
পিটিসি সাইট বলে। প্রকল্প শুরুর আগে নিবন্ধন করতে হয়। তবে মনে রাখতে হবে পিটিসি সাইটগুলো বেশির ভাগ ভুয়া হয়। তাই কাজের আগে নিশ্চিত হতে হবে সেটি প্রকৃত সাইট কি না। অনেক
সময় বন্ধুতে রেফারেন্স দিয়ে আয় করতে পারেন।
ডেটা
এন্ট্রির মাধ্যম টাকা আয়
অনলাইনে
সহজ কাজগুলোর একটি হচ্ছে ডেটা এন্ট্রি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য
আয় খুব কম। তবে এ ধরনের কাজ
অটোমেশনের কারণে এখন খুব কম পাওয়া যায়।
যাঁদের কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও দ্রুতগতির টাইপিং
দক্ষতা আছে, তাঁরা এ ধরনের কাজ
করতে পারবেন। অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সিং সাইটে এ ধরনের কাজ
রয়েছে। তবে যাঁদের কোনো কাজে দক্ষতা থাকে, তাঁরা সহজে কাজ পান এবং দ্রুত আয় বাড়াতে পারেন।
কাজ এখন হাতের মুঠোয় উপরের লেখাটি তাদের জন্য, যাদের ইন্টারনেটে আয়ের কোন অভিজ্ঞতা নেই।
তথ্যসূত্র ঃ অনলাইন
0 Comments