STAY WITH US

কিছু অভ্যাস ত্যাগ করুন আজীবন সুস্থ থাকুন

কিছু অভ্যাস ত্যাগ করে আজীবন সুস্থ থাকুন


bdroyal, bdroyal.com
কিছু অভ্যাস ত্যাগ করুন আজীবন সুস্থ থাকুন-bdroyal-www.bdroyal.com


কিছু ভালো অভ্যাস যেমন আমাদের জীবনকে উন্নত ও সুন্দর করে, তেমনি কিছু মন্দ অভ্যাস আমাদের জীবনে নানান নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন অনেক বাজে অভ্যাস আমাদের রয়েছে যা আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আমাদের অসুস্থ করে দিচ্ছে এবং আমাদের আয়ুষ্কাল কমিয়ে দিচ্ছে। যেসকল মন্দ অভ্যাস আমামদের আয়ুষ্কাল কমাতে পারে এমন দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস সম্পর্কে আমাদের এই আলোচনা।

খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
যদি আপনি প্রত্যেক খাবারেই লবণ খান, তাহলে ধরেনিন আমাদের স্বাস্থ্য বিপদের মধ্যে আছে, কারণ ডায়েট-সম্পর্কিত মৃত্যুর ৯.৫ শতাংশই ঘটিয়ে থাকে অত্যধিক লবণাক্ত খাবার, জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে। অত্যধিক লবণ হার্ট অথবা কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ার প্রধান কারণ। গবেষণায় হৃদরোগ, স্ট্রোক ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসে মৃত্যুর ৪৫.৪ শতাংশের সঙ্গে অত্যধিক লবণাক্ত খাবারের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। খাবার-সম্পর্কিত মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে অত্যধিক লবণ খাওয়া।

ভালোভাবে হাত পরিষ্কার না করা
ভালোভাবে হাত পরিষ্কার না করার কারনে আমাদের হাতে জীবাণু লেগে থাকে। অপরিষ্কার হাতের মাধ্যমে অনেক খাদ্যবাহিত অসুস্থতা ছড়ায়, কিন্তু সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া ডায়রিয়া রোগ সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে ফেলে, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে। ভালোভাবে হাত না ধোয়ার ফলে ২০০৩ সালে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোমের (এসএআরএস) প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল- সঠিকভাবে হাত ধোয়া এ ধরনের বিপজ্জনক শ্বাসপ্রশ্বাসীয় অসুস্থতা ছড়ানো প্রতিরোধ করতে পারে।

সকালের খাবারে অনিয়মিত যাওয়া
বিশ্ব বিখ্যাত পুষ্টিবিদ ডানা গ্রীন বলেন, ‘আসলেই দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে, সকালের খাবার বা ব্রেকফাস্ট।তিনি যোগ করেন, ‘ব্রেকফাস্ট সারাদিন আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে- তাই যদি আপনি ব্রেকফাস্ট না করেন, তাহলে দিনের অন্যান্য সময়ে বেশি করে খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাবে, এর ফলে ওজন বৃদ্ধি পাবে। আপনি জানেন যে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হৃদরোগ ও মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।


রাতের খাবারের পরপরি ঘুমিয়ে পড়া
আমদের অনেকেরই অভ্যাস রাতের খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া। কিন্তু এটা করবেন না। খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়লে হজমের প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হয়। এছাড়াও অম্বল আর পেট ফেঁপে যাওয়ার আশংকাও অনেকটা বেড়ে যায়। পেটে মেদ জমে এবং গ্যাসটিক জনিত সমস্যা বেড়ে যায়, তাই খাওয়ার পর অন্তত ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। আর একই সঙ্গে মনে রাখুন খাবার খাওয়ার পর এক জায়গায় বসে থাকবেন না।

মধ্যরাতে স্ন্যাকস জাতীয় খাবার খাওয়া
মধ্যরাতে মিষ্ট বা লবণাক্ত স্ন্যাকস জাতীয় খাবার হৃদরোগ অথবা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করেমেক্সিকো সিটিতে অবস্থিত ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোর গবেষণা অনুসারে। গবেষণা লেখক রুদ বিজস বলেন, ‘এই অভ্যাস হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়কারণ রাতের খাবার খাওয়ার পর ট্রাইগ্লাইসেরাইডের মাত্রা বেড়ে যায়।’ তিনি যোগ করেন, ‘ট্রাইগ্লাইসেরাইড হচ্ছে বিপজ্জনক রক্ত চর্বি যা ফ্যাটি টিস্যুতে (বেশিরভাগই আমাদের পেটের চারপাশে) জমা হয় এবং আপনি এসব থেকে সহজে মুক্ত হতে পারবেন না।’ তিনি পরামর্শ দেন, ‘আপনাকে সর্বোত্তম যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছেরাতে যথাসম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করা এবং রাতের খাবার ও সকালের খাবারের মধ্যে ব্যবধান যেন ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা থাকে।

অতিমাত্রায় ভিডিও দেখা
রাত জেগে টিভি দেখা, ফেসবুকিং, ইউটিউব বা অন্যান্য উপায়ে ভিডিও দেখা আমাদের ঘুমের পরিধি কমিয়ে ফেলে। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ অত্যধিক ভিডিও দেখেছিল তাদের নিম্ন স্লিপ কোয়ালিটিতে ভোগার সম্ভাবনা যারা ভিডিও দেখায় আসক্ত ছিল না তাদের তুলনায় ৯৮ শতাংশ বেশি ছিল। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিনের সভাপতি এবং পেরেলম্যান স্কুল অব মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক আইলিন এম. রোসেন বলেন, ‘এমনকি এক রাতের বিঘ্নিত ঘুম দিনে অত্যধিক নিদ্রালুভাবের কারণ হতে পারে, যা আপনাকে মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘনায় বা কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ফেলতে পারে।এক রাতের বিঘ্নিত ঘুম কিভাবে বিপজ্জনক হতে পারে? এ প্রসঙ্গে ডা. রোসেন বলেন, ‘বিঘ্নিত ঘুমের পর পারফরম্যান্স (এমনকি এক রাতের বিঘ্নিত ঘুমও) মাতাল লোকের পারফরম্যান্সের সমান।বেশিরভাগ মানুষ ইতোমধ্যে ক্রনিক ঘুমের ঘাটতিতে থাকে বলে এক রাতের বিঘ্নিত ঘুমও অবস্থাকে আরো খারাপ করতে পারে। দ্য আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিরাতে সাত ঘণ্টা বা আরো বেশি সময় ঘুমাতে পরামর্শ দিচ্ছে।

অনিরাপদ যৌনসহবাস করা
স্যাফাইয়ার ওমেনস হেলথ গ্রুপের সভাপতি এল মুর বলেন, ‘অনিরাপদ যৌনসহবাস আমাদের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।বর্তমানে এইচআইভি/এইডসকে ডেথ সেনটেন্সহিসেবে বিবেচনা করা হয় না এবং এটি অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসাযোগ্য, কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় ঝুঁকি এবং তা আমাদের জীবনকালের দৈর্ঘ্য কমায়, বলেন ডা. মুর। তিনি যোগ করেন, ‘অন্যান্য যৌন সংক্রমিত রোগও জীবননাশক হতে পারে, বিশেষ করে হেপাটাইটিস। যৌন সংক্রমিত রোগ থেকে নিরাপদ থেকে সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার করুন।

নখ কামড়ানো
নখ কামড়ানো কি আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে? এটি শুধু বাজে অভ্যাসই নয়, নখ কামড়ানোর মাধ্যমে ওরাল ব্যাকটেরিয়া (যেমন- এইকেনেলা করোডেনস) অথবা স্কিন ব্যাকটেরিয়া (যেমন- স্ট্রেপটোকক্কাস অথবা স্ট্যাফাইলোকক্কাস) ত্বকের সংস্পর্শে আসতে পারে, বলেন ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত জর্জ ওয়াশিংটন স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড হসপিটালের ডার্মাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অ্যাডাম ফ্রাইডম্যান। তিনি যোগ করেন, ‘নখ কামড়ানোর ফলে আমাদের প্যারোনাইশিয়া (নেইল ফোল্ডের চারপাশে ইনফেকশন, যেখানে ফোলা ও ব্যথা সৃষ্টি হয়), ফেলন (ফিঙ্গার প্যাডের স্ট্রেপ ইনফেকশন, যা অতি বেদনাদায়ক) এবং অন্যান্য ইনফেকশন হতে পারে। আমাদের রক্তপ্রবাহে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে এবং সেপসিস সৃষ্টি হতে পারে- সেপসিস হচ্ছে একটি সম্ভাব্য জীবননাশক রক্ত সংক্রমণ।

ব্রণ ফাটানো
ব্রণ আছে এমন প্রত্যেকেরই ব্রণ ফাটার অভ্যাস রয়েছে (তারা স্বীকার করুক কিংবা না করুক), কিন্তু ব্রণ ফাটার এই অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ডা. ফ্রাইডম্যান বলেন, ‘ব্রণ ফাটলে ত্বকের ভেতর আগ্রাসী ও ইনভেসিভ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে।ব্রণের ক্ষেত্রে ত্বকের ওপরের কিছু ব্যাকটেরিয়া পরিবর্তিত হয়। আমাদের হেয়ার ফলিকলে বাস করতে পছন্দ করে এমন একটি গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে পি. অ্যাকনি- ব্রণে এটির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং স্ট্যাফ ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও বেড়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে, মিথিসিলিন রেজিস্ট্যান্স স্ট্যাফ অরিয়াস (এমআরএসএ) ফোঁড়া, ফুরুঙ্কলস (হেয়ার ফলিকলের ফোঁড়া) ও কারবাঙ্কলসের (গুচ্ছবদ্ধ যন্ত্রণাদায়ক লাল ফোঁড়া) মতো স্কিন ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। ডা. ফ্রাইডম্যান বলেন, ‘ব্রণ ফাটলে এমআরএসএ সহজেই রক্তনালীর নেটওয়ার্ক, চোখ এবং এমনকি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রেও প্রবেশ করতে পারে।

ফ্লসিং এড়িয়ে যাওয়া
আমরা জানি যে, মাড়ির রোগ মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, কিন্তু নিয়মিত ফ্লসিং আমাদের আয়ু ছয় বছর বাড়াতে পারে, বলেন নিউ ইয়র্ক সিটির ডেন্টিস্ট সাউল প্রেসনার। তিনি যোগ করেন, ‘অনুমান করা হয় যে, ফ্লসিং মুখের মাইক্রোঅর্গানিজম বা জীবাণু হ্রাস করে, এভাবে এটি মুখের প্রদাহ কমায়। মাড়িতে প্রদাহ যত কম হবে মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা তত কমে যাবে- এর ফলে মুখ থেকে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস রক্তপ্রবাহে প্রবেশের ঝুঁকিও হ্রাস পাবে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

Post a Comment

0 Comments