হিন্দু আইনঅনুযায়ী বাংলাদেশে সম্পত্তি বণ্টন
হিন্দু আইন হিন্দুদের ধর্মীয় এবং ব্যক্তিগত আইন। এ আইন যারা জন্মসূত্রে হিন্দু, হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত, হিন্দু পিতা মাতার অবৈধ সন্তান এবং যে ক্ষেত্রে পিতা খ্রীষ্টান এবং মাতা হিন্দু সেই ক্ষেত্রে অবৈধ সন্তান যদি মায়ের কাছে হিন্দু আচার অনুযায়ী লালিত পালিত হয়, তবে এসব ক্ষেত্রে হিন্দু আইন প্রযোজ্য।
বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানে হিন্দুদের মধ্যে দুধরনের উত্তরাধিকার পদ্ধতি চালু রয়েছে। যথা-দায়ভাগ পদ্ধতি এবং মিতাক্ষরা পদ্ধতি। দায়ভাগ পদ্ধতি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে প্রচলিত আছে। দায়ভাগ মতে পিন্ডদানের অধিকারী ব্যক্তি মাত্রই মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী। যারা পিন্ড দিতে পারে তারাই মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তির ওয়ারিশ বলা হয়। ভারতের অন্যান্য প্রদেশ এবং পাকিস্তানে মিতাক্ষরা পদ্ধতি প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
দায়ভাগ উত্তরাধিকার আইনে অধিকার ভোগীদের তালিকা
দায়ভাগ স্কুলকে বেঙ্গল স্কুল বলা হয়। দায়ভাগ আইনে একজন হিন্দু তার প্রাপ্ত পৈত্রিক সম্পত্তিতে এবং স্বীয় পরিশ্রমে অর্জিত স্ব-উপার্জিত ভিন্ন সম্পত্তিতে পূর্ণ স্বত্বাধিকারী অর্থাত্ তার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। জীবিত অবস্থায় সে তার সর্বপ্রকার সম্পত্তি যে কোন প্রকারে হস্তান্তর করতে পারে। তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা তার ত্যক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার সূত্রে উত্তরাধিকারী হয়ে থাকে। দায়ভাগ আইনে উত্তরাধিকার নির্ণয় করতে যে নীতি অনুসরণ করা হয় তা মৃত ব্যক্তির আত্নার কল্যাণে আধ্যাত্নিক নীতি অর্থাত্ মৃত ব্যক্তির আত্নার কল্যাণের উদ্দেশ্যে তার পাবণা শ্রাদ্ধে পিন্ডদানের নীতি। শাস্ত্র অনুসারে মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধে যে ব্যক্তি পিন্ডদানের (অর্থাত্ পূজো করতে সক্ষম) অধিকারী সে সপিন্ড। সপিন্ডই মৃত ব্যক্তির ত্যক্ত সম্পত্তির অধিকারী।
আধ্যাত্নিক সুবিধা অর্পণের যোগ্যতার উপরেই দায়ভাগ মতবাদের উত্তরাধিকার নীতি প্রতিষ্ঠিত। পাবণ শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান হল আধ্যাত্নিক সুবিধানীতির ভিত্তি। এই অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠান পালনকারী তার মৃত পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে তিন ধরনের অঞ্জলি দিয়ে থাকে; যথা
(১) পিন্ড বা একটি সম্পূর্ণ কেক যাকে বলে অবিভক্ত অঞ্জলি এবং
(২) পিন্ড লেপা বা পিন্ডের টুকরা টুকরা অংশ যা পিন্ড তৈরীর সময় হাতে লেপে থাকে তাকে বলে বিভক্তি অঞ্জলি এবং
(৩) মৃত পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে জল অঞ্জলি অতি প্রাচীনকালে আতপ চাউল, দুধ, কলা, মিষ্টি ইত্যাদি একত্রে মেখে আমন্ত্রিত আত্মাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হত এবং একেই বলে পিন্ড দান। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন মৃত ব্যক্তিসহ উর্দ্ধতন তিন পুরুষদের আত্নাগন এই পিন্ড গ্রহণ করেন এবং তৃপ্ত হন। দায়ভাগ আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির তিন শ্রেণীর উত্তরাধিকারী, যথা-
(১) সপিন্ড
(২) সাকুল্য
(৩) সমানোদক
১) সপিন্ড: যে সব ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির আত্নার কল্যাণের উদ্দেশ্যে তার শ্রাদ্ধে পিন্ডদান করে এবং মৃত ব্যক্তির জীবিতকালে যে সকল ব্যক্তির আত্নার কল্যাণের উদ্দেশ্যে পিন্ডদান করতে বাধ্য, তারা সবাই পরস্পরের সপিন্ড।
২) সাকুল্য: যে সব আত্নীয় মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্বের সময় পিন্ডে পিন্ডলেপ প্রদান করে তারা মৃত ব্যক্তির সাকুল্য।
৩) সমানোদক: যে সকল আত্নীয় মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্বে পিন্ডে পিন্ডজল প্রদান করে তারা মৃত ব্যক্তির সমানোদক৷ সংক্ষেপে যে ব্যক্তি পিন্ডদান করে, যে ব্যক্তি পিন্ড গ্রহণ করে এবং যে ব্যক্তি পিন্ডদানে অংশগ্রহণ করে, তারা সকলেই পরস্পরের সপিন্ড। সপিন্ডরা সবাই মৃত ব্যক্তির সগোত্র নয়, তারা ভিন্ন গোত্র আত্নীয় হতে পারে। যেমন কন্যার পুত্র। সপিন্ড সাকুল্যের আগে এবং সাকুল্য সমানোদকের আগে মৃত ব্যক্তির ত্যক্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।
সংগ্রহ: ইন্টারনেট।
0 Comments